দাফনের ১৭ দিন পর জীবিত উদ্ধার কিশোর রবিউল

দাফনের ১৭ দিন পর জীবিত উদ্ধার করা হলো রবিউল ইসলাম নাইম (১৪) নামের এক কিশোরকে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার একটি ডোবা থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক কিশোরের মরদেহ উদ্ধারের পর সেটিকে রবিউল দাবি করে দাফন করেন তার বাবা-মা। তবে শুক্রবার (২২ আগস্ট) সিলেটের নবীগঞ্জ উপজেলার সৈয়দপুর এলাকা থেকে কিশোর রবিউলকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। এতে এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, জীবিত উদ্ধার হওয়া রবিউল ইসলাম নাইম সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার এলাকার গদিয়াচর গ্রামের কনাই মিয়ার ছেলে। সে ব্রাহ্মণগ্রাম এলাকায় অবস্থিত সুপ্রিম ফিলিং স্টেশনের পাশে “বগুড়া রেস্টুরেন্টে” কাজ করত। ২৬ জুলাই সে রেস্টুরেন্ট থেকে নিখোঁজ হয়। এরপর ৩ আগস্ট কুলাউড়ার বরমচাল ইউনিয়নের রেললাইনের পাশের একটি ডোবা থেকে অজ্ঞাতপরিচয়ের এক কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের বয়স আনুমানিক ১৩ বছর বলে উল্লেখ করে পুলিশ জানায়, তার পরনে ছিল লাল রঙের টি-শার্ট, নীল জিন্সের প্যান্ট ও কফি রঙের শার্ট। খবর পেয়ে মরদেহটি তাদের ছেলে রবিউলের বলে শনাক্ত করেন তার বাবা কনাই মিয়া ও মা পারুল বেগম। ৫ আগস্ট আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশটি দাফন করা হয়। রবিউলের পরিবার অভিযোগ করে, বগুড়া রেস্টুরেন্টের মালিক বুলবুল ফকির তাকে হত্যা করে লাশ কুলাউড়ায় ফেলে গেছে। মামলা নিতে গড়িমসি করার অভিযোগে ক্ষুব্ধ হয়ে রবিউলের স্বজনরা ৬ আগস্ট সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে রবিউলের মা পারুল বেগম বাদী হয়ে বুলবুল ফকিরসহ রেস্টুরেন্ট স্টাফদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ বুলবুলকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায়। ঘটনার মোড় পাল্টে যায় ২২ আগস্ট শুক্রবার, যখন কুলাউড়া থানার এসআই মুস্তাফিজুর রহমান নবীগঞ্জ থানা পুলিশের সহায়তায় ওই কিশোরকে জীবিত উদ্ধার করেন। রবিউলকে নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের সৈয়দপুর এলাকার তার আত্মীয় মো. জুবেলের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। শনিবার (২৩ আগস্ট) তাকে মৌলভীবাজার আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হয়। সেখানে সে জানায়, রেস্টুরেন্টের মালিকের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় সে স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিল। কুলাউড়া থানার ওসি মো. ওমর ফারুক বলেন, “রবিউল নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে আত্মগোপনে ছিল। আমরা ধারণা করছি, কোনো ব্যক্তির সঙ্গে বিরোধের কারণেই সে এ সিদ্ধান্ত নেয়। আদালতে জবানবন্দিতেও সে বিষয়টি স্বীকার করেছে।” এদিকে, যাকে রবিউল ভেবে দাফন করা হয়েছে, সেই কিশোরের পরিচয় এখনো অজানা। পুলিশ জানিয়েছে, এখনো কেউ সেই কিশোরের দাবি করেনি। ভবিষ্যতে কেউ দাবি করলে ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ রিপোর্ট অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুলিশ আরও জানায়, যেহেতু মূল ভিকটিম জীবিত অবস্থায় পাওয়া গেছে, তাই করা হত্যা মামলাটি আইনি প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।