সরকার বদলের পর রেমিট্যান্সে রেকর্ড জোয়ার: আট মাসেই ২,১৪৬ কোটি ডলার

সরকার পরিবর্তনের পর প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে অভাবনীয় উল্লম্ফন দেখা গেছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে দেশে এসেছে ২,১৪৬ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ২ লাখ ৬১ হাজার ৮১২ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)। এটি ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় ৪২৩ কোটি ডলার বা ৫১ হাজার ৬০০ কোটিরও বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, এটাই দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরের প্রথম আট মাসে প্রবাসী আয়ের সর্বোচ্চ রেকর্ড। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সরকারের পরিবর্তনের পর প্রবাসীদের আস্থার বৃদ্ধি এবং হুন্ডির প্রতি নিরুৎসাহিত হয়ে বৈধ পথে অর্থ পাঠানোর প্রবণতা বাড়ায় এই প্রবাহ দেখা যাচ্ছে। তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স ২০২৫ সালের মার্চ মাসে দেশে এসেছে সর্বোচ্চ ৩৩০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স। এরপর মে মাসে ২৯৭ কোটি এবং এপ্রিলে এসেছে ২৭৫ কোটি ডলার, যা দেশের ইতিহাসে মাসভিত্তিক রেমিট্যান্সেরও শীর্ষ তিন অবস্থান। রেমিট্যান্সের মাসভিত্তিক বিবরণ (২০২৫) জানুয়ারি: ২১৯ কোটি ডলার ফেব্রুয়ারি: ২৫৩ কোটি ডলার মার্চ: ৩৩০ কোটি ডলার (সর্বোচ্চ) এপ্রিল: ২৭৫ কোটি ডলার মে: ২৯৭ কোটি ডলার জুন: ২৮২ কোটি ডলার জুলাই: ২৪৮ কোটি ডলার আগস্ট: ২৪২ কোটি ডলার এর বিপরীতে ২০২৪ সালের জানুয়ারি-আগস্টে এসেছিল ১,৭২৩ কোটি ডলার এবং ২০২৩ সালের একই সময়ে রেমিট্যান্স ছিল ১,৪৬৮ কোটি ডলার। অর্থাৎ দুই বছরে একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় যথাক্রমে ২৪.৫৭% এবং ৪৬.۲১%। যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ রেমিট্যান্স প্রেরক দেশ বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও মালয়েশিয়া থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ এসেছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি আগ্রহী। বাংলাদেশ ব্যাংকের মন্তব্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “ডলারের দরের স্থিতিশীলতা মূল্যস্ফীতি কমার অন্যতম কারণ। আর এটি সম্ভব হয়েছে প্রবাসীরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে আরও বেশি অর্থ পাঠানোয়। হুন্ডির প্রবণতা এখন অনেকটাই কমে এসেছে।” রিজার্ভেও অগ্রগতি রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে ২০২৫ সালের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় ৩১.৩৩ বিলিয়ন ডলার (গ্রস)। আইএমএফের বিপিএম৬ মানদণ্ডে তা ২৬.৩১ বিলিয়ন। আগস্টের শুরুতে আকুর ২০২ কোটি ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ সাময়িকভাবে কমে ২৯.৫৩ বিলিয়নে নামে। তবে এটি ২০২৪ সালের আগস্টে (আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সময়) থাকা ২০.৪৮ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় অনেক বেশি। অর্থবছরভিত্তিক রেমিট্যান্সের ইতিহাস অর্থবছর রেমিট্যান্স (বিলিয়ন ডলার) ২০২৪-২৫ ৩০.৩৩ (সর্বোচ্চ) ২০২৩-২৪ ২৩.৯১ ২০২২-২৩ ২১.৬১ ২০২১-২২ ২১.০৩ ২০২০-২১ ২৪.৭৮ প্রবাসীদের ‘রেমিট্যান্স শাটডাউন’ থেকে রেকর্ড গড়ার যাত্রা ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সরকারবিরোধী গণঅভ্যুত্থান চলাকালে প্রবাসীরা ‘রেমিট্যান্স শাটডাউন’-এর মাধ্যমে সরকারবিরোধী এক অভিনব প্রতিবাদ গড়ে তুলেছিলেন। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দেশের অর্থনীতিতে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন ঘটে— শুরু হয় রেমিট্যান্সের জোয়ার, যা এবার সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।